বাংলা বিভাগের বিষয়ে লিখতে_গেলে প্রথমেই বিহারের মজঃফরপুর স্থিত এল.এস. কলেজের কথা লিখতে হয়, যেখানে এই বাংলা বিভাগের জন্ম হয়। বাবু লংগট সিং ৩রা জুলাই ১৮৯৯ সালে বর্তমানের এল.এস. কলেজ স্থাপনা করেন। এই কলেজে বাংলা ভাষা অধ্যাপনার কথা ছিল কিন্তু ১৯৫০ এর আগে বিভাগের নিজস্ব কোন অস্তি ত্ব ছিল না। অন্যান্য বিষয়ের বাঙালী প্রফেসারেরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে জীবিত রেখেছিলেন। প্র. বিজয় কুমার রায় (দর্শন শাস্ত্র) সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার শাস্ত্রী (সংস্কৃত বিভাগ) প্র. অতুলানন্দ সেন, প্র. বংশীধর ঘোষ, ডঃ জে.কে. সরকার (দর্শন শাস্ত্র) ডঃ হরিরঞ্জন ঘোষাল (ইতিহাস) প্রভৃতি বিদ্বানের যোগদান উল্লেখনীয়।
ইন্টার ও ডিগ্রী স্তরে পঠন পাঠন সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করার জন্য ১৯৫০ সালে বিহার সরকার বাংলা ভাষার
জন্য শিক্ষক নিযুক্ত করার প্রস্তাব পাস করেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম অধ্যক্ষ রূপে ডিসেম্বর ১৯৫১ সালে প্র. নন্দদুলাল রায় কার্য্যভার গ্রহন
করলেন। তার ঠিক একমাস পরে ২রা জানুয়ারী ১৯৫২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভক্ত হয়ে নিজস্ব বিভাগের অস্তিত্ব তৈরী করেন ও বিহার বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ হয়। প্র. নন্দদুলাল রায়
বিদ্বান ছিলেন। তিনি তিনটি বিষয়- সংস্কৃত, ইংরেজী ও বাংলা ভাষাতে মাস্টার ডিগ্রী করেছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি তিনটি ভাষাতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন। ১৯৫৯-৬০ পর্যন্ত তিনি একমাত্র প্রফেসার ছিলেন। ডঃ নন্দদুলাল রায়ের পরলোক গমনের পর ডঃ রণজীত রায় দ্বিতীয় অধ্যক্ষ রূপে ১৯৮০ তে যোগদান করেন। তাঁর সেবা সমাপ্তি হবার আগেই একটি দূর্ঘটনায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। আমরা তাঁর বহুমূল্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে গেলাম। 'বিহারে বাংলা সাহিত্য' একটি মূল্যবান এবং প্রামানিক গ্রন্থ।
১৯৭১ সালে বাংলা বিভাগে এম.এ পড়ান শুরু হয় ও স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগ স্থাপিত হয়।
১৯৭৭-এ ডঃ অমল কুমার ঘোষ ও ডঃ শুভ্রা গুপ্ত স্নাতকোত্তর-এ শিক্ষক রূপে নিযুক্ত হন। সেই সময় এই বিভাগে 4টি Post Sanction হয়। ১৯৮৩ সালে বাংলা সাহিত্যের প্রোথিতযশা অধ্যাপক ডঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য ৬ মাসের জন্য অতিথি অধ্যাপক হয়ে এই বিভাগকে গৌরবান্বিত করেন।
তৃতীয় অধ্যক্ষ রূপে ডঃ মঞ্জুলী ঘোষ ১৯৮৩ তে স্থানীয় এম.ডি.ডি.এম কলেজ থেকে এসে কার্য্যভার গ্রহন করেন। তিনি বিদূষী মহিলা ছিলেন ও সক্ষম অধ্যক্ষ ছিলেন। ওনার সফল চেষ্টায় ১৯৮৫-৮৭ তে এই বাংলা বিভাগ এল.এস. কলেজ থেকে বিভক্ত হয়ে P.G. Teaching Block-এ চলে আসে ও স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগ রূপে সংকলিত হতে থাকে। এই বিভাগে স্থানীয় বাঙালী ছাড়া পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র- ছাত্রীরা এসে পড়া শুরু করে। ১৯৮৫ সালে ডঃ মঞ্জুলী ঘোষ একটি International Seminar আয়োজন করেন ও সফলতা অর্জন করেন। তিনি ১৯৯২-এ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৯৩ সালে তার দেহবসান ঘটে, ফলে তাঁর বিভাগএক যোগ্য অধ্যক্ষকে হারিয়েছিল।
১৯৯২ সালে ডঃ অমল কুমার ঘোষ অধ্যক্ষ রূপে যোগদান করেন। ১৯৯৩ সালে বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের
নতুন নাম করণ হয় বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেদকার বিহার বিশ্ববিদ্যালয়। ১১ বছর সফল অধ্যক্ষ রূপে কাজ
করার পর ২০০৩ সালে তিনি অবসর গ্রহন করেন।
২০০৩ সালে অমলবাবুর সেবা নিবৃত্তির পরে ডঃ মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় স্নাতকোত্তর বিভাগে অধ্যক্ষ রূপে যোগদান করেন। অধ্যাপনা ছাড়া নানা প্রতিভা সঙ্গীত অনুবাদ, অভিনয় রঙ্গমঞ্চের নির্দেশনায় অনেক খ্যাতি
অর্জন করেন। তিনি ভারত সরকারের সংগীত নাটক আকাদেমিরও সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে Interna- tional Seminar আয়োজন করেন ও সফলতা অর্জন করেন। তাঁর প্রায় ১২টির বেশি গ্রন্থ আছে। ২০০৮ সালে ডঃ মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় অবসর গ্রহন করার পর ডঃ কল্যানী গুপ্ত বিভাগের কার্যভার গ্রহন
করলেন। সেই সময় মালদা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আসার ফলে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল। ফেব্রুয়ারী ২০০৯ সালে ডঃ ভক্তি গাঙ্গুলী স্থানীয় এম.ডি.ডি.এম কলেজ থেকে এসে অধ্যক্ষের ভার গ্রহন করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের সীট বাড়ার ফলে ও বাংলা বিভাগের প্রচারের ফলে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেল।
এই বাংলা বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার জন্য উন্নতমানের লাইব্রেরী আছে। বিভাগে বাংলা পড়ার জন্য আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এমনকি আন্দামান থেকে ছাত্র-ছাত্রী এসে এম.এ ও Ph.D ডিগ্রী পাস করে গেছে। এখানকার পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় অধ্যাপনা ও শিক্ষকতা করছে।
প্রায় ৬০ বৎসরের যাত্রায় বাংলা বিভাগ আজও বিহার রাজ্যে সগর্বে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রবাসী বাঙ্গালীদের বাংলা পড়ায় অনীহা থাকার দরুন কলেজ ও স্কুল গুলিতে ছাত্র-ছাত্রী না আসায় বাংলা পড়ান আর হয় না।
আমাদের বিহারের কামনা যে বাংলা বিভাগের এবং বিহারের বাংলা ভাষাভাষীদের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি